জীবন বৃত্তান্ত (CV) লিখার নিয়ম: সরকারী এবং বেসরকারী উভয় চাকরির ক্ষেত্রে জীবন বৃত্তান্ত খুবই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট। পৃথিবীর যেকোন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে আবেদন করার প্রথম পদক্ষেপ হল নিজের কর্মদক্ষতা এবং নিজের পরিচয় উপস্থাপন করা। সেটির একমাত্র মাধ্যম হল সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত।
নিয়োগকারীদের আর্কষণ বৃদ্ধি করার জন্য একটি সিভিতে বা জীবন বৃত্তান্তে কী কী থাকা উচিত তা নিচের উপস্থাপন করা হল।
কারিকুলাম (CV) কী?
কিরাকুলাম বিটা হচ্ছে একজন ব্যক্তির শিক্ষা ও চাকরি জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সারাংশ। সাধারণত এটি ১ পাতায় উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে হইা ২ পাতায়ও উপস্থাপন করা যায়। জীবন বৃত্তান্ত বা সিভি সাধারণত চাকরির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে এটি অন্যান্য কাজেও বেড়ে চলেছে।
সিভিতে লেখার সময় ইংরেজী ভাষায় লেখা উচিত। কেননা, বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অফিশিয়াল ভাষা ইংরেজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে।
যাহোক, সিভি (CV) ও রিজিউম (Resume) দুইটিই বাংলাদেশে জীবন বৃত্তান্ত অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আসলে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে এদের মধ্যে। সিভি (CV) চাকরি ছাড়াও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। রিজিউম (Resume) শুধু একটি নির্দিষ্ট চাকরির জন্যই বানানো এবং ব্যবহার করা হয়। সিভিতে আপনার ঠিকানা সহ, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, পূর্বের চাকরির অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ আপনার সকল শিক্ষাভিত্তিক অর্জনগুলো উপস্থাপন করতে পারেন।
CV ’তে বা জীবন বৃত্তান্ত ’এ কী কী তথ্য উপস্থাপন করা উচিত:
আপনার সকল সাধারণ তথ্য সিভিতে থাকা উচিত। সাধারন তথ্যের মধ্যে আপনার নাম ও ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ইত্যাদি। তবে অনেক ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য সিভি তৈরী করবেন। তার উপর ভিত্তি করে সিভির কিছু অংশ পরিবর্তন করা হয়।
নাম ও ঠিকানা:
সিভির প্রথমে সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে। তারপর মোবাইল নাম্বার সহ আপনার ই-মেইল সংযুক্ত করতে পারেন। আর ই-মেইল খোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্ম্পূণ নাম ব্যবহার করবেন। অন্য কোন কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।
ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্য:
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আপনার সিভিটি প্রেরণ করবেন। সেই প্রতিষ্ঠান আপনাকে যে পদে নিয়োগ করবে, সেই পদ আপনি নিয়োগ হলে ভবিষ্যতে আপনি কী করবেন। তা সম্পর্কে ১০০ শব্দের মধ্যে একটি তথ্য উপস্থাপনকে বলে Career Objectives.
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
শিক্ষাগত যোগ্যতা’তে আপনার সকল শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরবেন। এস.এস.সি পাস থেকে শুরু করবেন এবং সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার ফলাফল সহ উপস্থাপন করবেন। পাশাপাশি, কোন প্রতিষ্ঠান কোন পরীক্ষা দিয়েছেন এবং কত সাথে উর্ত্তীণ হয়েছেন। তাও উপস্থাপন করবেন।
কম্পিউটার দক্ষতা:
যেহেতু পৃথিবী প্রতিটি কাজই এখন কম্পিউটার নির্ভর। তাই আপনার কম্পিউটারের উপর কিকি কাজ জানা আছে তা তুলে ধরবেন। কেননা, প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকারীরা যে সিভি যত বেশী ভারী দেখবে, সেই ব্যক্তিকে তারা নিয়োগ দেবে। এক্ষেত্রে কম্পিউটার স্কিল থাকা খুবই প্রয়োজন।
কর্ম অভিজ্ঞতা:
আপনার যদি পূর্বে কোন প্রকার কর্ম অভিজ্ঞতা থাকে। তা ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্যের পর পরই উল্লেখ করবেন। আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে কত বছর কর্মরত ছিলেন এবং কোন পদে কতদিন কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন। তা সুন্দরভাবে উপস্থান করবেন।
ভাষাগত দক্ষতা:
আপনি বাংলা ভাষা ছাড়াও কোন কোন ভাষায় কতুটুকু পারদর্শী তা সুন্দর ভাবে তুলে ধরবেন।
দক্ষতা:
আপনি যদি কোনো বিষয়ের উপর দক্ষতা গ্রহণ করে থাকেন। তা সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরবেন।
ছবি সংযুক্তির ক্ষেত্রে:
জী্বন বৃত্তান্ত লিখা সম্পূর্ণ হলে একটি ছবি সংযুক্ত করে নিবেন। আর হ্যা, ছবি অবশ্যই পাসর্পোট সাইজের ফর্মালভাবে তুলবেন। ফেসবুকে দেয়া বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ছবি সিভিতে প্রদান করবেন না। সুন্দর ফর্মাল ড্রেসআপ করে ছবি তুলে সিভিতে সংযুক্ত করবেন। ছবি তুলার সময় কালো চশমা ব্যবহার করবেন না । সিভিতে সম্প্রতি তুলা ছবি ব্যবহার করবেন।
স্বাক্ষর ও তারিখ:
সিভিতে উপরে তারিখ এবং সবার শেষে আপনার স্বাক্ষর নিশ্চিত করবেন।
বর্তমানে সিভি কেমন হওয়া উচিত:
সিভি হচ্ছে একটি ডকুমেন্ট। যার মাধ্যমে আপনার অনুপস্থিতিতে একজন অপরিচিতি ব্যক্তি আপনার সম্পর্কে একটি ধারণা পাবে। তাই, সিভি লেখার প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার স্মার্টনেস যাতে ফুটে উঠে তা খেয়াল রাখা উচিত। চলুন দেখা যাক একটি সিভি কীভাবে লেখা উচিত:
সিভির দৈঘ্য:
সিভির দৈর্ঘ্য কেমন হবে তা উপরে প্রথমে আলোচন করা হয়েছে। সিভি হচ্ছে এমন একটি ডকুমেন্ট, যেখানে অনেক কম শব্দ ব্যবহার করে অনেক কিছু তুলে ধরা। কেননা, যারা আপনার সিভিটি দেখবে, তাদের কাছে এমন অনেক সিভি অলরেডি জমা আছে। যার ফলে, তারা দ্রুততার সাথে সিভিগুলো দেখতে চায়। এক্ষেত্রে আপনার সিভিটি অন্যদের চেয়ে দীর্ঘ হয়। তবে তাদের আপনার প্রতি একটি নেগেটিভিটি চলে আসবে।
CVলেখার কাগজের সাইজ:
সিভি লেখার শুরুতে আপনার কাগজের সাইজ ঠিক করে নিবেন। সিভি লেখার সময় A4 সাইজ বেচে নিবেন। সিভি প্রিন্ট করার সময়ও A4 সাইজের কাগজে প্রিন্ট করবেন। তাছাড়াও সিভি লেখার সময় চারদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মার্জিন রাখবেন।
ফন্ট:
সিভি-টি ফরমাল রাখার জন্য আপনি Calibri, Arial বা, Times New Roman এই তিনটি ফন্টের একটা ব্যবহার করতে পারেন। আর বাংলায় লেখার ক্ষেত্রে বিজয় বায়ান্নে SutonnyMJ ফন্ট ফ্যামেলি ব্যবহার করবেন। হেডলাইন অথবা টাইটেলের ক্ষেত্রে ফন্ট সাইজ ১৪-১৬ এর মধ্যে রাখবেন। প্রয়োজন হলে ফন্টগুলো বোল্ড করে নিবেন। বিস্তারিত লেখার ক্ষেত্রে ফন্ট সাইজ ১০-১২ এর মধ্যে রাখবেন।
গ্রামার ও বানান:
সিভি লেখার ক্ষেত্রে গ্রামার ও বানান শুদ্ধ রাখবেন। লেখা শেষ হলে অনেকবার পড়বেন। প্রয়োজন হলে সিভিটি সিনিয়র কারোর মাধ্যমে পড়িয়ে নিবেন। যে সিভির লেখার ধরণ জানে।
CV বা জীবন বৃত্তান্ত ফরম্যাট:
বর্তমানে সিভি লেখার জন্য বিভিন্ন ধরণে ফরম্যাট রয়েছে। যার ফলে সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত লেখা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। চলুন দেখা যাক, কোন কোন জায়গা হতে সিভির বিভিন্ন ফরমেট সহজেই বেরা করা যায়:
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড হতে:
আপনি যদি পুরোপুরি নিজে একটি সিভি বানাতে চান, সেক্ষেত্রে এম এস ওয়ার্ড সবথেকে ভালো মাধ্যম হতে পারে আপনার জন্য। বাই ডিফল্ট কিছু ফরম্যাট এম এস ওয়ার্ড এ দেওয়া থাকে। তাদের মধ্য থেকে একটা নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন আপনি। অথবা নিজে নিজেই ফরম্যাট বানিয়ে সেটি দিয়ে আপনার সিভি বানাতে পারেন।
সিভি বিল্ডিং ওয়েবসাইট থেকে বানানো:
বর্তমানে অনেক সিভি বিল্ডিং ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ফ্রি-তে সিভি বানানোর সার্ভিস দিয়ে আসছে। গুগলে সার্চ করলে এরকম অনেক ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন। পছন্দ মতো একটি ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই একটি মানসম্মত সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত বানিয়ে নিতে পারবেন।
নিচে কিছু সিভির ধরণ উপস্থাপন করা হল:
সিভি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে: CV Writing Rules,
এছাড়াও, টেকনো মোবাইল এর দাম ২০২২ , ওয়ালটন মোবাইল দাম ২০২২