জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত এবং জাপানে কোন কাজগুলোর বেতন বেশি এই সম্পর্কে আজকে আমরা এই কন্টেন্টের মধ্যে আলোচনা করব আশা করি সম্পূর্ণ কন্টেনটি যদি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে জাপানে সর্বনিম্ন বেতন এবং সর্বোচ্চ বেতন কত জানতে পারবেন এবং বর্তমানে কোন কাজগুলোতে চাহিদা বেশি সেই সম্পর্কেও এখানে আমরা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হলো জাপান। এখানে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত মানুষ কর্মী হিসেবে সেখানে কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। অনেকেই জানে না জাপানে সর্বোচ্চ বেতন কত এবং শ্রমিক হিসেবে সর্বনিম্ন বেতন কত। এ বিষয়টি যোগাযোগ মাধ্যমে এবং অনেক জায়গায় অনেকেই জানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সঠিক ভাবে কোথাও বিষয়টি তুলে ধরা নয় নির্দিষ্টভাবে আজকে আমরা এই কাজগুলোর বেতন কত এবং সুবিধা কি এই নিয়ে জানতে পারবেন।
জাপানে কেন বেতন বেশি হয়
জাপান হল অর্থনৈতিক দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি দেশ। জাপানের কর্মী সংকট থাকার কারণে বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। মূলত কর্মী সংকর থাকার কারণেই জাপানে কাজের বেতন বেশি পাওয়া যায়। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে জাপানে অন্যতম বড় কাজের বাজার হিসেবে ধরা হয়। তবে জাপানে কাজ করার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞতা প্রয়োজন আর এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই মূলত অধিক পরিমাণ বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে অনেকেই মনে করে থাকে যে বাংলাদেশের টাকার মান এবং জাপানের টাকার মান প্রায় সমান তাহলে বেতন কিভাবে এত বেশি টাকা দেওয়া হয়। স্বাভাবিক ব্যাপার জাপানে কর্মী সংখ্যার সংকট থাকার কারণেই মূলত জাপানে কাজের বেতন বেশি দেওয়া হয়। সেইসাথে জাপানে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা এবং কোম্পানি হতে যাতায়াত খরচসহ আনুষঙ্গিক আরো বিষয়গুলো দেওয়া হয়ে থাকে।
জাপানে সর্বোচ্চ বেতন কত
জাপানে একজন কর্মীর সর্বোচ্চ বেতন হলো ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তাছাড়াও যারা কম্পিউটার রিলেটেড বা আইটি সেক্টর গুলোতে কাজ করে তাদের বেতন দ্বিগুণ হারে প্রদান করা হয়। নরমালি সাধারণ শ্রমিক হিসাবে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকার ও বেশি বেতন পাওয়া সম্ভব। তবে দক্ষতা অর্জন করে আরো উন্নত মানের কাজগুলোতে ঢুকতে পারলে আরো ভালো বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বর্তমানে জাপানে সর্বোচ্চ বেতন প্রদান করা হয় আইটি সেক্টরগুলোতে এবং ইঞ্জিনিয়ারিং জব গুলোতে। তবে যারা এই সমস্ত কাজগুলোতে যেতে চাচ্ছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ভাষাগত দক্ষতা দেখেই কিন্তু যেতে হবে। সেই সাথে অবশ্যই নির্দিষ্ট কাজের উপর অভিজ্ঞতার একটি প্রমাণ পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানিতে কাজ করার বিষয় ও তারা দেখে থাকে।
জাপানে সর্বনিম্ন বেতন কত
জাপানি একজন কর্মীর সর্বনিম্ন ১ লক্ষ বিশ হাজার টাকা বেতন। এক্ষেত্রে যারা একেবারে নিম্নমানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকে তাদেরই এমন বেতন প্রদান করা হয়। জাপানে উন্নত মানের কাজগুলোতে বেতন স্বাভাবিকভাবে অনেকটাই বেশি থাকে। তাছাড়াও নিম্নমানের কাজগুলোর মধ্যে দেড় লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে আরো বেশি পরিমাণের বেতন পাওয়াও সম্ভব।
তবে জাপানি যদি আপনি ড্রাইভিং কাজে অথবা ফ্যাক্টরি কাজে কাজ করে থাকেন তাহলে দেড় লক্ষ টাকা প্লাস বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উপরোক্ত কাজগুলোতে করার জন্য অবশ্যই আপনার অভিজ্ঞতা এবং ডাইভিং কাজ করার জন্য অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। তাহলে আপনি জাপানে ভালো পরিমাণ বেতন তুলতে পারবেন।
জাপানে নিম্নমানের কাজের জন্য একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন এক লক্ষ 20 হাজার টাকা।
জাপানে বেসিক বেতন কত
জাপানে একজন শ্রমিকের বেসিক বেতন হিসেবে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হয়। তবে সব ধরনের কাজ মিলিয়ে বেসিক বেতন নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে আপনাদের জেনে রাখা উচিত যে বর্তমানে আইটি রিলেটেড অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং জবগুলোতে কিন্তু বেতন স্বাভাবিকভাবে অনেকটাই বেশি হয়।
এখানে শুধুমাত্র আমরা যারা বৈদেশিক শ্রমিক হিসেবে জাপানে কর্মরত আছে তাদের বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে স্টুডেন্ট সহ অন্যান্য কাজের বিষয়গুলো কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আলাদা পর্যায়ক্রমে আমরা প্রত্যেকটি সেক্টর নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে বেতন এখানে তুলে ধরেছি।
জাপানে শ্রমিকদের বেতন কত
জাপানে একজন বিদেশী শ্রমিকের বেতন এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা। সাধারণত ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার অথবা ফুড প্যাকেজিং সহ রেস্টুরেন্ট হোটেল সহ অন্যান্য কাজগুলোর বেতন এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। তাছাড়া বছরের শেষে এবং বছরের শুরুতে আরো বোনাস প্রদান করা হয়।
তবে এসব কোম্পানিগুলোতে যাতায়াতের খরচ এবং বছর শেষে বোনাস প্রদান করে থাকে তাছাড়া থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা এবং কোম্পানি কর্তৃক বিভিন্ন সিটিতে দূর করার ও সুযোগ প্রদান করা হয়।
সরকারিভাবে জাপানে বেতন কত
আপনি যদি সরকারিভাবে ট্রেনিং নিয়ে জাপানে যান তাহলে সরকারি ভাবে জাপানে বেতন প্রদান করা হয় এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত। সরকারি মাধ্যমে যাওয়ার জন্য সরাসরি বুয়েসেল কর্তৃক প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই আপনাদেরকে যেতে হবে।

সরকারি মাধ্যমে গেলে কোন ধরনের টাকা পয়সা লাগে না এবং ভালো পরিমাণ বেতন পাওয়া যায় পাশাপাশি বছর শেষ হওয়ার পরে অথবা আপনার কাজ শেষ হওয়ার পরে ৫ লক্ষ টাকা এক্সট্রা ভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি যখন পরবর্তীতে কাজ থেকে চলে আসবেন তখন এই টাকাটি আপনি বুঝতে পাবেন।
জাপানে কোন কাজে বেতন বেশি
জাপানের সবথেকে কম্পিউটার রিলেটেড কাজের বেতন বেশি। জাপান হলো টেকনোলজি দিক থেকে অনেক উন্নতি একটি দেশ তাই টেকনোলজি কাজের জন্য কম্পিউটার এক্সপার্টদের বেতন অন্যান্য কাজের তুলনায় দ্বিগুণ হারে বেতন প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একজন কম্পিউটার এক্সপার্ট এর বেতন ২ লক্ষ ৫০হাজার টাকা থেকে শুরু করে আরো বেশি পরিমাণ হয়ে থাকে।
জাপান কাজের বেতন | প্রথম পাতা |
কাজের স্থান | জাপান |
কাজের নাম | ইলেকট্রিশিয়ান |
বেতন | ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
কাজের সময় | দৈনিক ৮ ঘন্টা |
তবে জাপানি তারা এই আইটি সেক্টরগুলোতে কাজ করতে চাচ্ছেন তারা ওয়েব ডেভেলপার,, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ডেভেলপার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, এনিমেশন, মুভি সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজগুলোর বেতন অনেকটাই বেশি পাওয়া সম্ভব।
জাপানে বেতন বেশি ২২ টি কাজের তালিকা
কাজের নাম | কাজের বেতন |
কম্পিউটার অপারেটর | ২ লক্ষ ৫০ হাজার |
নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার | ৩ লক্ষ ৫০ হাজার |
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার | ২ লক্ষ টাকা |
রেস্টুরেন্ট কর্মী | ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
ফুড ডেলিভারি বয় | ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা |
হোটেল কর্মী | ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা |
কনস্ট্রাকশন | ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
ফুড প্যাকেজিং | ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা |
ইলেকট্রিশিয়ান | ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
পাইপ ফিটিং | ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
টাইলস মিস্ত্রি | ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
ফ্যাক্টরি কর্মী | ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
গ্যারেজকর্মী | ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
ড্রাইভিং | দুই লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
মেকানিক্যাল | ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার | ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
কৃষি কাজের বেতন | ২ লক্ষ টাকা |
টিচার | ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা |
পরিচ্ছন্নতা কর্মী | ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা |
মেডিকেল ক্লিনার | ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা |
রোড কারফিটিং | ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা |
জাপানে কত ঘন্টা কাজ করতে হয়
জাপানের আইন অনুযায়ী একজন কর্মীর কাজের সময় সর্বোচ্চ ৮ ঘন্টা। জাপানে একজন শ্রমিক ওভারটাইমসহ সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টা কাজ করার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ভিসাতে যারা কাজ করবে তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সপ্তাহে ২৮ ঘন্টা কাজ করার সুযোগ থাকে। তবে আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কলেজ এর মাধ্যমে জানিয়ে কাজে নিয়োজিত হতে হবে।
সাধারণত যারা স্টুডেন্ট ভিসাতে সেখানে গিয়ে কাজ করে এর অধিক পরিমাণ সময়ও কাজে সময় দিয়ে থাকে তাতে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় নি। তাই আপনারা যারা স্টুডেন্ট ভিসাতে গিয়ে সেখানে কাজ করতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু সুযোগ সুবিধা রয়েছে বুঝাই যাচ্ছে।
আপনি জেনে খুশি হবেন যে জাপানে কিন্তু কম্পিউটার রিলেটেড কাজগুলোতে বেতন অন্যান্য কাজের তুলনায় দ্বিগুণ হারে দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যদি আপনি ভাল কোন স্কিল ডেভেলপ করে কম্পিউটার রিলেটেড কাজগুলোতে যদি জাপানে যেতে পারেন তাহলে কিন্তু বেতন অন্যান্য কাজের তুলনায় অনেক বেশি পাবেন।
জাপানে কম বেতনের কাজ কোনটি
জাপানে অন্যান্য দেশের তুলনায় সব কাজের বেতন-ই বেশি পরিমাণ হয়। তবে নরমালি যারা কম অভিজ্ঞ তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু যে কোন কাজের বেতনই অনেকটাই কম প্রদান করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে বলা যায় যে নির্ধারিত কাজের উপর যদি আপনার কোন অভিজ্ঞতা না থাকে তারপরেই আপনি কম বেতনে বিভিন্ন কোম্পানিতে সুযোগ করে নিতে পারবেন।
তবে জাপানি গেলে কিন্তু আপনাকে অবশ্যই বাধ্যতামূলক ঐ সমস্ত কোম্পানির মাধ্যমে প্রত্যেকটা ব্যক্তিকেই আবারো ট্রেনিং করানো হয়। এক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে এক্সপার্ট বানিয়ে পরবর্তীতে কাজে নিয়োগ দিবে তাই অবশ্যই আপনারা সেখানে যাওয়ার আগে ভাষাটা শিখে যাবেন এতে করে আপনাদের ট্রেনিং নিতে সাহায্য করবে।
জাপানের অন্যান্য কাজের ভিসা সংক্রান্ত তথ্য পড়ুন